
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো:বাংলা সিনেমা আবারও তার চিরাচরিত ঘরানার বাইরে গিয়ে এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করাল। পরিচালক অনির্বান রায়ের নতুন ছবি ‘২৯ ফেব্রুয়ারি’ মুক্তি পাওয়ার আগেই সিনেমা মহলে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। শিরোনামের এই বিরল লিপ-ডে দিনটি আসলে ক্যালেন্ডারের একটি তারিখ নয়, এটি যেন সাংবাদিকতার নৈতিকতা এবং একাকী একজন প্রতিবেদকের মানসিক ভাঙনের প্রতীকী রূপক।
ছবির মূল চরিত্র রাগা, একজন সাংবাদিক। তার জীবনে ২৯ ফেব্রুয়ারি তারিখটি বারবার ফিরে আসে এক অভিশাপের মতো। যেদিন তার চোখের সামনে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর এসে পড়ে, সেদিন থেকেই রাগা আটকে পড়ে এক টাইম-লুপের গোলকধাঁধায়। কিন্তু এটি কোনো সায়েন্স ফিকশন নয়। বরং এই লুপ হলো আধুনিক সংবাদমাধ্যম থেকে সৃষ্ট মানসিক চাপ, ব্যর্থতার ভয়, ভুল সংবাদের অপরাধবোধ এবং ‘ভাইরাল’ হওয়ার নিরন্তর দৌড়ের ক্লান্তির প্রতিচ্ছবি।
প্রতিটি লুপের পুনরাবৃত্তি সাংবাদিক রাগার চেতনার এক একটি স্তর উন্মোচন করে, যেখানে সত্যের সাথে একজন প্রতিবেদকের নড়বড়ে সম্পর্কের প্রশ্ন ওঠে। গল্পটি তীক্ষ্ণভাবে প্রশ্ন করে: প্রতিটি শিরোনাম যখন কেবল তাড়াহুড়ো আর ক্ষোভ দাবি করে, তখন একজন সাংবাদিক কতক্ষণ তার পেশাগত স্থিরতা ধরে রাখতে পারে? রাগা কি পারবে তার কাঁধের পেশাগত দায় ও ট্রমা থেকে মুক্ত হয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে বা অন্যকে সাহায্য করতে? এই টানাপোড়েনই ছবির মূল আকর্ষণ।
ছবিতে পাহাড়ি পরিবেশ, ছৌ নাচের মুখোশধারী উপজাতি এবং ভাঙাচোরা পথের ব্যবহার দর্শককে এক অদ্ভুত ইঙ্গিতপূর্ণ ভ্রমের (ইল্যুশন)জগতে নিয়ে যায়। তবে এই দৃশ্যগুলি কোনো ভৌতিক গল্পের অংশ নয়, বরং এগুলো হলো সাংবাদিক রাগার যন্ত্রণাক্লিষ্ট মনের অবাস্তব প্রতিফলন। পরিচালক স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বাইরের দৃশ্যপট আসলে ভেতরের যন্ত্রণারই প্রতিচ্ছবি মাত্র।
‘২৯ ফেব্রুয়ারি’ শুধুমাত্র একটি সিনেমা নয়, এটি সমসাময়িক ‘নিউজ কালচার’-এর নৈতিকতা নিয়ে এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন। যে সাংবাদিক অন্যের গল্প বলে, সে যখন নিজেই গল্পের চরিত্র হয়ে যায়, তখন তার জীবনে কী ঘটে? সময়ের এই লুপ সত্যের ভারে ভেঙে পড়তে থাকা এক বিপর্যস্ত মনের প্রতিধ্বনি ছাড়া আর কিছুই নয়।
(Feed Source: zeenews.com)
