সমান শ্রমে ভিন্ন পারিশ্রমিক! বেতন-বৈষম্যে সরব এই বলিউড নারীরা

সমান শ্রমে ভিন্ন পারিশ্রমিক! বেতন-বৈষম্যে সরব এই বলিউড নারীরা

নয়াদিল্লি: ২৬ অগাস্ট, শুক্রবার। নারী সমতা দিবস (Women’s Equality Day)। দিনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের (United States Constitution) উনবিংশ সংশোধনী গ্রহণের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, যা নারীদের ভোট দেওয়ার অধিকার দিয়েছে। সমতার দিক থেকে আজ নারীরা যে পর্যায়ে সেখানে পৌঁছতে অনেক সময় লেগেছে, তবে ধন্যবাদ প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে নারীদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টাকে। যদিও তাঁরা অনেক দূর এগিয়েছেন, সম্পূর্ণ এবং সত্য অর্থে সমতা অর্জনের জন্য আরও অনেক কিছু অর্জন করতে হবে।

নারী-পুরুষ বৈষম্য

নারীর সমতা নিয়ে কথা বললে তার মধ্যে অবশ্যই আসে বেতনের (pay disparity) কথা। বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে, বিভিন্ন ধরনের কাজের ক্ষেত্রে, মহিলা কর্মীদের কম পারিশ্রমিক দেওয়ার প্রথা আবারও পুরুষতান্ত্রিক সমাজেরই পরিচয় দেয়। এমনকী গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড অর্থাৎ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতও তার ব্যতিক্রম নয়। দীপিকা পাড়ুকোন, করিনা কপূর খানের মতো প্রথম সারির নায়িকারাও অনেক সময়ে তাঁদের পুরুষ সহকর্মীর সমান পারিশ্রমিক পান না কিন্তু হয়তো ছবিতে তাঁদের চরিত্র বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বিগত বেশ কিছু বছরে একাধিক বলিউড অভিনেত্রী এই বেতন-বৈষম্য নিয়ে মুখ খুলেছেন। সম পরিমাণ কাজের জন্য সম পরিমাণ পারিশ্রমিকের দাবি তুলেছেন। দেখা যাক, কাজের কণ্ঠ শোনা গেছে।

দীপিকা পাড়ুকোন: বৈষম্যের ব্যাপারে সর্বদাই সরব দীপিকা পাড়ুকোন। তিনি সঞ্জয় লীলা ভনশালির ছবি ‘বৈজু বাওরা’ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কারণ তিনি তাঁর স্বামী রণবীরের সমান পারিশ্রমিক চেয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী একবার বলেন, ‘আমি আমার ট্র্যাক রেকর্ড জানি এবং আমার মূল্য জানি। আমি জানি আমার সহ-অভিনেতার ছবি আমার গুলোর মতো ভাল ব্যবসা করেনি। ফলে কথাটার কোনও মানেই হয় না। ওই একটা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কোনও ছবিকে না বলা ভুল বলে মনে করি না।’

সোনম কপূর: এই ব্যাপারে ‘কফি উইথ করণ’-এ অভিনেত্রী মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ‘এই পারিশ্রমিকে বৈষম্যটা জঘন্য। আমি এর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি, তারপর সেই চরিত্রগুলো আমি পাই না এবং তাতে আমার সমস্যা নেই। আমি সেটা সামলে নিতে পারব। আমি গত দুই-তিন বছরে বুঝতে পেরেছি যে কাউকে বিচার করার অধিকার আমার নেই। আমি বিশেষাধিকারপ্রাপ্ত, তাই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্যিই কঠিন নয়। আমি মনে করি, নারী হিসেবে, অভিনেতা হিসেবে, শিল্পী হিসেবে আমাদের প্রাপ্য পাওয়ার সময় এসেছে।’

প্রিয়ঙ্কা চোপড়া: এক সাক্ষাৎকারে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া বলেন, ‘আমি প্রতি বছর এটি অনুভব করি, বিশেষ করে যখন আপনি সত্যিই বড় অভিনেতাদের সঙ্গে সিনেমা করছেন, তা ভারতে হোক বা আমেরিকায়। যদি একজন অভিনেতা ১০০ টাকা পান, তাহলে কথোপকথন সর্বোচ্চ ৮ টাকা থেকে শুরু হবে। ব্যবধানটা এতটাই নড়বড়ে। আমাকে সোজাসুজি বলা হয়েছে, বড়, পুরুষ অভিনেতা যুক্ত সিনেমায় যদি এটি একটি মহিলার চরিত্র হয়, তাহলে আপনার মূল্যকে ততটা বিবেচনা করা হয় না।’

কঙ্গনা রানাউত: অভিনেত্রী এক সাক্ষাৎকারে একবার বলেছিলেন, ‘আমার পুরুষ সহকর্মীদের তিনগুণ পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়। একটি চলচ্চিত্রের সাফল্যের নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না তাহলে এমন বৈষম্য কেন? আমি কোনও ছবিতে একটি দৃশ্য বা একটি আইটেম গান করি না। আমি কেবল নিজের পক্ষে কথা বলতে পারি এবং আমি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দাবি করি, কিন্তু আমি এখনও মনে করি আমি কম পারিশ্রমিক পাই।’

করিনা কপূর খান: কপূর পরিবারের কন্যা, পটৌডি পরিবারের বউ, বেবো বলেন, ‘মাত্র কয়েক বছর আগে, সিনেমায় একজন পুরুষ বা মহিলা আসলে সমান পারিশ্রমিক পাওয়ার বিষয়ে কেউ কথা বলত না। এখন আমাদের মধ্যে অনেকেই এটা নিয়ে খুব সোচ্চার। আমি যা চাই তা আমি পরিষ্কার করে দিয়েছি এবং আমি মনে করি সম্মান দেওয়া উচিত। এটি দাবি করা নয়, এটি মহিলাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বিষয়।’

বিদ্যা বালান: একাধিক নারীকেন্দ্রিক ছবিতে দেখা গেছে বিদ্যা বালানকে। তিনি বলেন, ‘বলিউডে নারী ও পুরুষের বেতন বৈষম্য রয়েছে। তবে আমি নিশ্চিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবধান কমবে। আমরা অবশ্যই এই ঘাটতি পূরণের জন্য লড়াই করব।’

তাপসী পান্নু: অভিনেত্রী একবার বলেন, কোনও অভিনেতার পারিশ্রমিক বাড়লে বলা হয় তাঁর বাজারদর বেড়েছে। কিন্তু কোনও অভিনেত্রী বেশি পারিশ্রমিক চাইলে বলা হয় তাঁর বেশি চাহিদা। ‘এটা সবসময়ের গল্প।’

ক্যাটরিনা কাইফ: এক সাক্ষাৎকারে ক্যাটরিনা বলেন, ‘আমার যুক্তি হল, আমি অনেক কাছের প্রযোজকের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, নারী-প্রধান চলচ্চিত্রগুলি দাও – হতে পারে এক বা দু’জন মহিলা লিড সহ – একই বাজেট এবং মাউন্টিং যা আপনি অভিনেতাদের বা এক পুরুষ ও মহিলা তারকাকে একসঙ্গে দিচ্ছেন। এটি একটি মহিলা চলচ্চিত্রে দিন এবং দেখুন তারপর কী হয়।’

অনুষ্কা শর্মা: এই বিষয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘যদি আমার মতো একজন অভিনেতা থাকে, তবে তাঁকে আমার চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক দেওয়া হবে কারণ সে একজন ছেলে। পুরুষরা যতদিন ইচ্ছা কাজ করতে পারে, কিন্তু মহিলারা ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিক আছে যতক্ষণ তাঁরা তরুণী এবং পছন্দসই। আপনি যদি আউটডোর শ্যুটে থাকেন তবে আপনি জানেন যে পুরুষ অভিনেতা আপনার থেকে আরও ভাল রুম পেতে চলেছে। কেন?’

অদিতি রাও হায়দরি: এক সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথপোকথনে জানান যে কঠোর পরিশ্রম করা সত্ত্বেও কেন মহিলারা পুরুষদের থেকে কম পারিশ্রমিক পান। ‘আমি সত্যিই বুঝতে পারি না কেন আমাদের পুরুষ অভিনেতাদের থেকে কম পারিশ্রমিক দেওয়া হয় কারণ আমরা সমান চেষ্টা করছি এবং সাম্প্রতিক অতীত দেখিয়েছে যে অভিনেত্রীরাও হিট ছবি দিতে পারে। আমরা আরও ভাল পারিশ্রমিক পাওয়ার যোগ্য, অভিনেতারা যা পান তার সমান।’

সোনাক্ষী সিন্হা: সোনাক্ষী সিন্হা বলেছিলেন যে তিনি বলিউডে একটি জিনিস পরিবর্তন করতে চান তা হল বেতন বৈষম্য।