জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ডায়াবেটিসকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার। এই রোগে দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীর ঠিক ভাবে খাদ্যকে পরিপাক করতে না পারলে ডায়াবেটিস হতে পারে। রক্তে অত্যধিক গ্লুকোজ থাকলে তা শরীরের রক্তনালির ক্ষতি করে। পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্রেও ডায়াবেটিসের প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। হাই ব্লাড সুগারের কারণে ঝাপসা দৃষ্টি, ছানি, গ্লুকোমা এবং রেটিনোপ্যাথির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে একজন মানুষকে বাধ্য হয়ে তাঁর জীবনযাত্রায় অনেক ক্ষেত্রে বদল আনতে হয়। পরিবর্তন আনতে হয় খাদ্যাভ্যাসেও। অনিয়ন্ত্রিত ব্লাডসুগার থেকে ঘটতে পারে দৃষ্টিহীনতা। এছাড়া চোখের রক্তবাহিকাগুলি থেকে রক্তক্ষরণও হতে পারে ডায়াবেটিসে। ডায়াবেটিস দুর্বল করে তুলতে পারে ধমনীকেও। ধমনীতে রক্ত চলাচলের সমস্যাও তৈরি হয়। এসবের জেরে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। রেটিনার বিভিন্ন অংশে ঠিকমতো অক্সিজেন পৌঁছতে না পারলেও চোখে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
চিকিৎসকেরা বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে এই সব সমস্যা একেবারেই ফেলে রাখা যাবে না:
১. ক্যাটাব়্যাক্ট বা ছানি ( Cataracts ): একটা বয়সের পর ছানির সমস্যা সকলেরই হতে পারে। তবে সুগারে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে তা ঘটে একটু তাড়াতাড়ি। চোখের লেন্সে ঘোলাটে ভাব দেখা গেলে তা ছানি হতে পারে। তাছাড়া এর আরও কয়েকটি উপসর্গ হল, রাতে দেখার সমস্যা, চোখে আলো পড়লে অস্বস্তি, ডাবল ভিশন (একই জিনিস দুটি-তিনটি করে দেখা) ইত্য়াদি। অর্থাৎ, চোখে কোনও অস্বস্তি হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিন।
২. ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি ( Diabetic retinopathy ): রেটিনার উপর রক্তনালি থাকে। এই সব ব্লাড ভেসেল রেটিনাতে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছতে সাহায্য় করে। কিন্তু ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে এই সব রক্তনালি দুর্বল হয়ে পড়ে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি মারাত্মক আকার নেয়। দৃষ্টি ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকে। আবার কিছু ক্ষেত্রে হঠাৎই আসতে পারে অন্ধত্ব। তাই ডায়াবেটিস ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে চোখ বাঁচানো যায়।
৩. গ্লুকোমা: গ্লুকোমা সকলেরই হতে পারে, তবে যাঁরা ডায়াবেটিক তাঁদের ক্ষেত্রে এর ঝুঁকি বেশি। তাই নিয়মিত চেক-আপ অন্ত্য়ত জরুরি। গ্লুকোমা অপটিক নার্ভের ক্ষতি করে। অনেক সময়ে চোখের ভিতরের স্নায়ু নষ্ট হয়। এর প্রভাব পড়ে দৃষ্টিশক্তির উপর। দেখা যেতে পারে একাধিক ব্লাইন্ড স্পট। এর ফলে নষ্ট হয় দৃষ্টিশক্তি। এই বিপদ এড়াতেও নিয়মিত চেক-আপ প্রয়োজন।
৪. ম্যাকুলার এডিমা: ম্যাকুলা হল রেটিনার কেন্দ্র, যার সাহায্যে আমরা দেখতে পাই। ডায়াবেটিসের কারণে ম্যাকুলার ক্ষতি হলে দৃষ্টিশক্তির ক্ষতিও অনিবার্য। এটি হলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, কোনও কিছু পড়তে অসুবিধা হয়।
৫. ঝাপসা দৃষ্টি: চোখের সমস্য়া হলে, তার প্রাথমিক উপসর্গ হল ঝাপসা দৃষ্টি। অতএব, এমন সমস্য়া হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ডায়াবেটিস সম্পর্কিত চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করার সহজ উপায় হল– রক্তে শর্করার মাত্রা, কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। জেনে নিন, ডায়াবেটিসের কারণে চোখে যেসব সমস্যা ঘটে কীভাবে সেসবের প্রতিরোধ করবেন:
১. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ: আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি নিয়মিত আই চেক-আপ করুন।
২. রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল মোকাবিলা করার উপায় জেনে নিন আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে। কারণ এই সব সমস্যা ডায়াবেটিক রোগীর চোখকে আরও বিপদে ফেলতে পারে।
৩. ধূমপান বন্ধ: ডাক্তারেরা বলেন, ধূমপান ধূমপায়ীর চোখের রক্তনালির ক্ষতি করতে পারে। তাই অবিলম্বে ধূমপান বন্ধ করা জরুরি।
৪. আলট্রা-ভায়োলেট রে এড়িয়ে: সানগ্লাস পরে সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রা-ভায়োলেট রে থেকে নিজেকে ও নিজের চোখকে রক্ষা করুন। এই রশ্মির কারণেও ছানির সমস্য়া তৈরি হতে পারে।
(Feed Source: zeenews.com)