পাহাড়প্রমাণ টাকা এখন স্মৃতি, একবছর ধরে জেলে পার্থ-অর্পিতা, বিচারের অপেক্ষায়

পাহাড়প্রমাণ টাকা এখন স্মৃতি, একবছর ধরে জেলে পার্থ-অর্পিতা, বিচারের অপেক্ষায়

সত্যজিৎ বৈদ্য, কমলকৃষ্ণ দে, ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ (SSC Case)। আর সেই মামলায় জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে পাহাড়প্রমাণ টাকা। কিন্তু দুর্নীতির মাথারা ধরা পড়বে কবে? চাকরির দাবিতে আর কতদিন রাস্তায় বসে থাকবেন নিজেদের যোগ্য বলে দাবি করা চাকরিপ্রার্থীরা? পার্থ-অর্পিতার গ্রেফতারির পর একবছর হয়ে গেলেও, প্রশ্নের উত্তর অধরাই।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ঠিক এক বছর আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ। জেলে রয়েছেন অর্পিতাও। তার পর একে একে অনেকেই জেলে ঢুকেছেন। কিন্তু আজও বঞ্চিত হয়ে রয়ে গিয়েছেন হাজার হাজার যোগ্য চাকরিপ্রার্থী। রোদ-ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

এই এক বছরে কম টানাপোড়েনের সাক্ষী হননি রাজ্যবাসী। তদন্তের গতিপথ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। কিন্তু এখনও আশা ছাড়তে নারাজ চাকরি প্রার্থী পলাশ মণ্ডল, বশির আহমেদ হালদাররা। পলাশের কথায়, “মাঝে এক বছর কেটে গিয়েছে। আইনি জটিলতা রয়েছে। সরকার পদক্ষেপ না করলে, কিছু হবে না।” বশির বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কথার বাস্তবায়ন হয়নি। একের পর এক নেতা-মন্ত্রী জেলে গিয়েছেন। কিন্তু আমরা বঞ্চনায় রয়েছি, তবে এখনও আশায় রয়েছি।”

তবে চাকরিপ্রার্থীরা আশা নিয়ে থাকলেও, নিয়োগ দুর্নীতির মামলার তদন্ত কবে শেষ করবে ED, CBI, সারদা-নারদকাণ্ডের মতো বছরের পর বছর কেটে যাবে না তো, প্রশ্ন উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। শুধু আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা নন, আদালতও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বার বার। ২০২২ সালের ১৪ জুন, মামলার শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য ছিল, “ডজনখানেক সিবিআই নির্দেশ হয়েছে। তার লাভ কী হবে, সেটা এখন নিজেই ভাবছি। সিবিআইয়ের কোনও কর্মী নেই।” এমনকি তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে নিম্ন আদালত ও বিশেষ সিবিআই আদালতেও, ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে।

এ প্রসঙ্গে সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “এখনও অনেকের গ্রেফতারের প্রয়োজন আছে। ইডি, সিবিআই যাতে শীতঘুমে না যায়, এজন্য আমরা বলেছিলাম চোর ধরো, জেল ভরো।” সারদা-নারদার মতো অনন্তকাল ধরে তদন্ত চলবে না তো? উত্তরে সেলিম বলেন, “বিজেপি থাকলে হবে। কারণ, আডবানীর মানসপুত্রী ছিলেন মমতা।”

তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের বক্তব্য, “রবীন্দ্রনাথের নোবেল খুঁজে দিতে পারেনি সিবিআই। নেতাই-নন্দীগ্রামের ঘটনার এখনও সুরাহা করতে পারেনি। সেটা যদি ভুলেও যাই, শুধুমাত্র এক বছর সিবিআই ২৬টা কেস হয়েছে, ক’টার সুরাহা হয়েছে? সিবিআই-এর নিরপেক্ষতা কোথায়?”

এর আগে, সারদা, রোজভ্যালিকাণ্ডে প্রতারিত হয়েছেন বাংলার লক্ষ লক্ষ আমানতকারী। জলে চলে গিয়েছে তাঁদের কষ্টের সঞ্চয়। ঠিক একই ভাবে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের জেরে, বঞ্চিত হয়েছেন হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী। কিন্তু তাঁরা কবে স্কুলের ছেলেমেয়েদের পড়াতে পারবেন? আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তদন্ত আরও তাড়াতাড়ি হোক আমরা চাইছি। অফিসাররা অত্যন্ত দক্ষ অফিসার। অনেক সময় মনে হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে।”

পার্থঘনিষ্ঠ অর্পিতার দুই ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের পর, শান্তিনিকেতনে ‘অপা’ নামে তাঁদের একটি বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসাররা। ‘অপা’র দলিলের নথি অনুযায়ী, ২০১২ সালে, এই বাড়ি-সহ জমি কিনেছিলেন পার্থ এবং অর্পিতা। এক বছর ধরে জেলবন্দি রয়েছেন তাঁরা দু’জনেই। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একই জায়গায় ঠাঁই হয়েছে তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য, জীবনকৃষ্ণ সাহার মতো হেভিওয়েটদের। কিন্তু, তাঁদের মাথার উপর হাত ছিল কার?
তা কি কখনও জানা যাবে? প্রশ্নের সদুত্তর নেই এখনও।

(Feed Source: abplive.com)