সুদীপ্ত সেন ৯ বছর ধরে জেলে, ক’জন টাকা ফেরত পেয়েছেন, ১৪ মাস জেলে পার্থ, কী হয়েছে? অভিষেক

সুদীপ্ত সেন ৯ বছর ধরে জেলে, ক’জন টাকা ফেরত পেয়েছেন, ১৪ মাস জেলে পার্থ, কী হয়েছে? অভিষেক
কলকাতা: দিনভর ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ED) দফতর থেকে বেরোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। আর বেরিয়ে এসেই তদন্তকারী সংস্থার তীব্র সমালোচনা করলেন তৃণমূল সাংসদ। তদন্তকারী সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন অভিষেক। জানিয়ে দিলেন, সারদা, নারদ, আজ পর্যন্ত কোনও তদন্তেরই সুরাহা করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থাগুলি। শুধু নির্বাচনের আগে-পিছে বার বার ডেকে পাঠানো রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বুধবার I.N.D.I.A জোটের বৈঠকে না গিয়ে, ED-র দফতরে হাজিরা দেন অভিষেক। তার পর নয়-সাড়ে নয় ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদপর্ব চলে। শেষ পর্যন্ত রাত ৯টার কিছু ক্ষণ আগে ED-র দফতর থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। আর সেখানেই ED-র বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অভিষেক বলেন, “বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলিতেই শুধু যায় ED. মহারাষ্ট্রে কী হয়েছে দেখেছেন। অজিত পওয়ারের বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ সিবিআই-ইডি মামলা ছিল। কিন্তু এখন বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারে। ফলে মামলাও থিতিয়ে গিয়েছে। এই হল ED, CBI. আধিকারিকদের নিয়ে কিছু বলার নেই, রাজনৈতিক প্রভুদের খুশি করতে ইচ্ছের বিরুদ্ধে এসব করতে হচ্ছে তাঁদের। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে।”

সারদা এবং নারদকাণ্ড থেকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়েও এদিন মুখ খোলেন অভিষেক। বলেন, “পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর ১৪ মাস পেরিয়ে গিয়েছে। কী হয়েছে বলুন? সারদা মামলা ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালে এসে পড়েছে। এই সাড়ে ন’বছরে ট্রায়ালও শুরু করতে পারেনি।  ২০১৬ সালে নারদকাণ্ড সামনে আসে। ২০১৭ সালে হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। ছ’-সাত বছর ধরে তদন্ত হয়। মেরুদণ্ড বিক্রি করে অন্যত্র চলে গিয়েছে যারা, তাদের ডেকে পর্যন্ত পাঠানো হয়নি। সারদায় কতজন টাকা ফেরত পেয়েছেন? সুদীপ্ত সেন নিজে বলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী টাকা নিয়েছেন। তাঁকে গ্রেফতার করা তো দূর, ডেকে পাঠানো পর্যন্ত হয়নি। এই যদি কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা হয়, তাহলে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।”

তদন্তের নামে মাসের পর মাস জেল হেফাজতে রেখে হেনস্থা করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন অভিষেক। বলেন, “প্রায় ন’বছর ধরে হেফাজতে সুদীপ্ত সেন, ক’টা লোক টাকা ফেরত পেয়েছেন সারদা থেকে। পার্থ চট্টোপাধ্যা ১৪ মাস ধরে জেলে, কী হয়েছে? যাদের টিভির পর্দায়, হাত পেতে টাকা নিতে দেখা যায়, তাদের বেলায় হাইকোর্ট বলে না, এদের ডাকা হচ্ছে না কেন। অথচ যাকে হেনস্থা করা হচ্ছে শুধু, কেউ কেউ কী ভূমিকা নিয়েছেন, নাম নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তদন্তকারী সংস্থাকে অনুরোধ করব, ওই বিচারপতির সামনে আমার বয়ান পেশ করুন।”

বার বার ডেকে পাঠিয়ে সময় নষ্ট করা হচ্ছে বলেও এদিন মন্তব্য করেন অভিষেক। বলেন, “শুধু সময় নষ্ট। যাঁরা ডেকে পাঠাচ্ছেন, তাঁদেরও সময় নষ্ট। যাঁরা ED-র দফতরে কাজ করছেন, তাঁরা কর্তব্য পালন করছেন। দোষ দিই না কাউকে। রাজনৈতিক প্রভুদের খুশির করতে ইচ্ছের বিরুদ্ধে অনেক সময়, অনেক কিছু করতে হচ্ছে।”

বেছে বেছে I.N.D.I.A জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠকের দিন তাঁকে ডেকে পাঠানো নিয়েও এদিন মন্তব্য করেন অভিষেক। বলেন, “১৪টি দলের প্রতিনিধিরা জায়গা পেয়েছেন কমিটিতে। আমার দলের তরফে আমার নাম মনোনীত করা হয়। সব দল ছেড়ে কাকে নোটিস দিয়েছে ED? আমাকে। এতেই স্পষ্ট যে, I.N.D.I.A জোট গঠনে তৃণমূলের ভূমিকা কতটা। রাজনৈতিক ভাবে লড়াইয়ে পেরে না ওঠে, অফিসারদের কাজে লাগানো হচ্ছে। কিন্তু নয়, সাড়ে নয় ঘণ্টা কেন, ২৪ ঘণ্টা জেরা করলেও আমার মেরুদণ্ড বিক্রি হবে না। বাংলার মানুষ মাথানত করতে জানে না।”

এ প্রসঙ্গে ‘ফেলুদা’র উল্লেখও টানেন অভিষেক। জানান, ফেলুদা বলতেন আগে অপরাধ দেখেন তিনি। তার পর অপরাধী। জটায়ু অপরাধ ঠিক করে নেন আগে। ED-CBI জটায়ুর মতো বলে দাবি করেন অভিষেক। আর বিজেপি-তে চলে গেলে ধোয়া তুলসিপাতা, বলেও মন্তব্য করেন।

(Feed Source: abplive.com)