রঞ্জি ট্রফিতে দুরন্ত সেঞ্চুরি করেও আফশোস অনুষ্টুপের, অভিষেকেই উজ্জ্বল সৌরভ

রঞ্জি ট্রফিতে দুরন্ত সেঞ্চুরি করেও আফশোস অনুষ্টুপের, অভিষেকেই উজ্জ্বল সৌরভ
সন্দীপ সরকার, কলকাতা: সেঞ্চুরির জন্য অনেক অভিনন্দন। সেই সঙ্গে যেভাবে অভিষেক ম্যাচে খেলতে নামা সৌরভ পালকে গাইড করলেন…

প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই মোবাইল ফোনের অপর প্রান্তের কণ্ঠস্বর বলে উঠল, ‘গাইড তো দেব আনন্দ করেছিলেন। আমি করব কেন?’

অনুষ্টুপ মজুমদার (Anustup Majumdar) এমনই। ময়দান যাকে ভালবেসে ডাকে রুকু নামে। বাংলা বিপাকে পড়লেই তাঁর ব্যাট ঝলসে উঠবে, আর দলকে তিনি টেনে তুলবেন খাদের কিনারা থেকে, এ যেন গত পাঁচ বছর ধরে বঙ্গ ক্রিকেটের পরিচিত চিত্রনাট্য হয়ে উঠেছে। ঋদ্ধিমান সাহার অভাব অনেকটাই ঢেকে দিচ্ছেন চাপের মুখে দিনের পর দিন পারফর্ম করে। শুক্রবার রঞ্জি ট্রফির (Ranji Trophy) প্রথম ম্যাচের প্রথম দিনই অন্ধ্র প্রদেশের বিরুদ্ধে ঝকঝকে সেঞ্চুরি করলেন চন্দননগরের ক্রিকেটার। সেই সঙ্গে ওপেনার সৌরভ পালকে আগলে রাখলেন। সৌরভ সেঞ্চুরির মাত্র ৪ রান দূরে থামলেন। ৯৬ রান করে ফিরলেন। যা নিয়ে সৌরভের আক্ষেপ রয়েছে। তার চেয়েও যেন বেশি আফশোস অনুষ্টুপের।

বিশাখাপত্তনম থেকে মোবাইল ফোনে রুকু বললেন, ‘সেঞ্চুরিটা অল্পের জন্য হাতছাড়া হল ওর। ভাল ব্যাট করছিল। ওর জন্য খারাপই লাগছে।’ যোগ করলেন, ‘আমি চেষ্টা করছিলাম যাতে ও স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে।’ আর নবীণকে আগলে রাখার পথে নিজের সেঞ্চুরি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৪তম সেঞ্চুরি। ১৩৯ বলে ১২৫ রান। ১৫টি চার, জোড়া ছক্কা। স্ট্রাইক রেট? ৮৯.৯২। কার্যত ওয়ান ডে ক্রিকেটের আদলে ব্যাটিং করেছেন।

অনুষ্টুপের যে ইনিংস দেখে মুগ্ধ বাংলার কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী। ফোনে বলছিলেন, ‘ক্রিকেটে অসম্ভব কিছুই না। তবে রুকু যদি আর পাঁচ বছর আগে এইরকম ব্যাটিং করত, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসন্ন সিরিজে ভারতের টেস্ট দলে থাকত।’ যোগ করলেন, ‘দুটো লাইন বললেই বোঝানো যাবে, রুকুর কী ঘরানা। ও বাঁহাতি স্পিনারকে স্টেপ আউট করে মিড উইকেটে মারতে পারে। আবার অফস্পিনারকে স্টেপ আউট করে কভার আর মিড অফের মধ্যে দিয়েও মারতে পারে। অবিশ্বাস্য ব্যাটিং। ওর সঙ্গে দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলেছি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, লক্ষ্মীরতন শুক্ল, মনোজ তিওয়ারির ঘরানার ব্যাটিং করে ও।’

শুক্রবার বিশাখাপত্তনমে অনুষ্টুপ যখন ব্যাট করতে নামেন, ৬২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে বাংলা। তৃতীয় উইকেটে ১৮৯ রান যোগ করেন সৌরভের সঙ্গে। ৯৬ রান করে সৌরভ ফিরলেও, সেঞ্চুরি সম্পূর্ণ করেন অনুষ্টুপ। তাও দিনের শেষে আক্ষেপ যাচ্ছে না। অনুষ্টুপ বলছিলেন, ‘দিনের খেলা শেষ হওয়ার ৯ বল বাকি থাকতে আউট হয়ে গেলাম। ক্রিজে অপরাজিত থাকলে আরও ভাল লাগত।’

বিজয় হাজারে ট্রফিতে জোড়া সেঞ্চুরি করেছিলেন। অনুষ্টুপ বলছেন, ‘মরশুমের শুরু থেকে ছন্দে রয়েছি। দলের প্রয়োজনে রান করে ভাল লাগছে।’ বিজয় হাজারে ট্রফিতে থানেতে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে যাওয়ার আগে ফোনে ছেলে বলেছিল, বাবা, তোমার এই মরশুমে সেঞ্চুরি নেই? সেই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছিলেন অনুষ্টুপ। অন্ধ্র প্রদেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরির পর ছেলে খুশি? অনুষ্টুপ বলছেন, ‘ওর সঙ্গে এখনও কথা হয়নি। রাতে ফোন করব।’

শুক্রবার টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা। এই ম্যাচে অভিষেক হল ত্রয়ীর। সৌরভ ছাড়াও শ্রেয়াংশ ঘোষ ও মহম্মদ শামির ভাই মহম্মদ কাইফ। বৃহস্পতিবারই যা লিখেছিল এবিপি লাইভ বাংলা। সৌরভ নজর কাড়লেও রান পাননি শ্রেয়াংশ। ১১ করে ফেরেন। সুদীপ ঘরামি আউট হন ১৮ রান করে।

দিনের শেষে বাংলার স্কোর ২৮৯/৪। ৮৬ ওভারে। ক্রিজে রয়েছেন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি (১৫ ব্যাটিং) ও মহম্মদ কাইফ (০ ব্যাটিং)। এখান থেকে কত রানে পৌঁছনো লক্ষ্য? অনুষ্টুপ বলছেন, ‘আমাদের শনিবার অন্তত দুটো সেশন ব্যাট করতে হবে। ৪৫০-৫০০ রান হওয়া উচিত।’

(Feed Source: abplive.com)